আব্দুস সালাম,টেকনাফ (কক্সবাজার)
কক্সবাজারের টেকনাফে সারারাত মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে থেমে থেমে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির বিকট শব্দ ভেসে আসছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে মর্টার শেল বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে এপারের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করেছে। এতে টেকনাফ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড টহল জোরদার করেছে।
সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেল বিস্ফোরণ গোলার শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফের পৌরসভার কয়েকটি এলাকা। সীমান্তে মিয়ানমারের মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণে এপারে সীমান্তের বাসিন্দাদের মাঝে অস্বস্তি বাড়ছে।
রাতভর বিস্ফোরণ ও ভারী গোলার শব্দ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘রাতে সীমান্তের ওপার থেকে থেমে থেমে ভারী মর্টারশেলের শব্দ শুনতে পাই। এতে এখানকার মানুষের মাঝে ভয়ভীতি বাড়ছে। ওপারে যুদ্ধ বৃদ্ধির কারণে সেখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে।’
সীমান্তের বাসিন্দারা বলেন, কয়েক দিন ধরে টেকনাফে প্রবল বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্য এক সপ্তাহ পর আবার মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ওপারের যুদ্ধের কারণে এপারে টেকনাফের নাইট্যংপাড়া, কায়ুকখালীপাড়া, জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, কুলালপাড়া, খাংগার ডেইল, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, সাবরাংয়ের মন্ডল পাড়া, মগপাড়া, আছারবনিয়া,পানছড়ি পাড়া, ডেগিল্ল্যারবিল,ডেইল পাড়া,ঝিনাপাড়া,নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া,দক্ষিন পাড়া,মিস্ত্রি পাড়া,কোনা পাড়া,মাঝের পাড়া এলাকায় মর্টারশেল ও বোমার বিকট শব্দে বাড়ি-ঘর কাঁপছে।
সীমান্তের পূর্ব দিকে মিয়ানমারের কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শীলখালী, নাকপুরা গ্রামে গৃহযুদ্ধ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদীতে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা টহল বৃদ্ধি করেছে।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সীমান্তবর্তী রাখাইনে সংঘাত চলমান রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি রাত-দিন টহল অব্যাহত রেখেছে।
সীমান্তের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা ইমান শরীফ বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে বড় ধরনের ভারী বিস্ফোরণের শব্দ এপারে পাওয়া যাচ্ছে। এ শব্দে আতঙ্কে অনেকের ঘুম ভাঙছে। সীমান্তের ওপারে মংডুতে চলমান যুদ্ধে গোলাগুলি বৃদ্ধি পেয়েছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ‘ওপারে সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক অবস্থানে রয়েছে। বিকট শব্দে সীমান্তের মানুষরা যাতে নির্ভয়ে থাকে, সেজন্য তাদের খোঁজ-খবর রাখছি।’
পাঠকের মতামত